top of page

Ramakrishna Math & Ramakrishna Mission Sevashrama Garbeta

Ramakrishna Math and Ramakrishna Mission Sevashrama, Garbeta

(A Branch Centre of Ramakrishna Math, P.O.-Belur Math, Dist-Howrah, West Bengal, 711202)

Garbeta, P.O. Amlagora,
Dt. Paschim Medinipur,
West Bengal, Pin- 721 121, India

☎︎  76795 40831, 87775 98715;
✉︎
garbeta@rkmm.org

গড়বেতার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ইতিকথা

১৯১৪ সাল, গড়বেতা ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ হয়। বেলুড় মঠ থেকে মায়ের শিষ্য স্বামী শৈলানন্দজী মহারাজ হুমগড় ও আমলাশুলি গ্রামে ত্রাণ কার্যের জন্য আসেন এবং দুটি ত্রাণ শিবির স্থাপন করে স্থানীয় জনগণের সহায়তার ব্যাপক ত্রাণকার্য করেন। ত্রাণকার্য শেষ হলে শৈলানন্দজী মহারাজ, কিছুদিন গনকবাদী নিবাসী রামপদ ঘোষ মহাশয়ের বাড়িতে বিশ্রাম নেন। সেই সময় মিশনের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে গণকবাদীর রামপদ ঘোষ, শিবনারায়ণ রায়, বসন্তকুমার সরকার, ফনি সান্যাল ও অন্যান্য স্থানীয় রামকৃষ্ণ অনুরাগে ভক্তগণ স্বামী শৈলানন্দজী মহারাজকে ত্রাণ ও সেবামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু জমি দান করেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে গড়বেতায় একটি রামকৃষ্ণ মঠ স্থাপন করার প্রস্তাব দেন।

এর কিছুদিনের মধ্যে শ্রীশ্রীমা ট্রেন যোগে বিষ্ণুপুর থেকে গড়বেতার উপর দিয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন। স্বামী শৈলানন্দজী মহারাজ গড়বেতা স্টেশনে মায়ের সঙ্গে দেখা করে শ্রীশ্রীমাকে ভক্তদের কথা জানান ও গড়বেতায় ঠাকুরের মঠ শুরু করার অনুমতি চান। শ্রীশ্রীমা সম্মতি প্রদান করেন। ফলশ্রুতিতে রামপদ ঘোষ মহাশয় ২৫ বিঘা জমি বেলুড় মঠকে দান করেন। এছাড়া শিবনারায়ণ রায়, উপেন্দ্রনাথ গোস্বামী ও সন্তোষ কুমার ঘোষ মহাশয় প্রমুখেরা আরো কিছু কিছু জমি মঠকে দান করেন। ফলে ১৯১৫ সালে স্বামী সারদানন্দজী মহারাজ পৌরহিত্যে রামকৃষ্ণ মঠ, গড়বেতা আশ্রমের শুভ সূচনা হয় এবং স্বামী শৈলানন্দজী মহারাজ প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

স্থানীয় ভক্তবৃন্দের ব্যবস্থাপনায় আশ্রমের জন্য একটি টিনের ছাউনি দেওয়া থাকার ঘর ও একটি খড়ের চালা তৈরি করে আশ্রম শুরু হয়। এর পরের বছর একটি বড় দালান তৈরি হলে আশ্রম তার স্থায়ী রূপ পায়।

১৯১৫ সালে আশ্রম শুরুর কয়েকদিনের মধ্যে দাতব্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসালয় খোলার মাধ্যমে মঠে সেবা কার্য শুরু হয়। মহারাজ নিজেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন। পরের স্থানীয় ভক্ত রাধানাথ ঘোষ মহাশয় মহারাজকে সহযোগিতা করেন।

এর পরের বছর- ১৯১৬ সালে তৈরি হয় স্থানীয় আশ্রমের প্রথম স্থায়ী বাড়ি। সেই সময় গণকবাদী অঞ্চলে কোন বিদ্যালয় না থাকাতে স্থানীয় জনগণের অনুরোধে বড় বাড়ির হল ঘরেতে একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুরু হয়। মহারাজরা থাকতেন পাশে ছোট ঘরগুলিতে। ক্রমে আশ্রমে যুক্ত হয় যাত্রাবাস। বড় হলেই দিনের বেলা স্কুল ও স্কুলের পড়ে তা ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তখন পূজা হতো বড় বিল্ডিং-এর লাগোয়া ঘেরা বারান্দায়।

১৯৫২ সালে স্বামী বিশ্বপ্রাণানন্দ (সুমন্ত মহারাজ) কর্মী হিসেবে আসেন। ওনার আসার কিছুদিনের মধ্যেই শৈলানন্দ মহারাজ শরীর খারাপ হওয়ার জন্য কাশির Home of Service-এ চলে গেলে পরবর্তী অধ্যক্ষ হন স্বামী বিশ্বদেবানন্দ (রজনী মহারাজ)। রজনী মহারাজ প্রায় কলিয়ারি ফিল্ডে চাঁদা আদায় করতে যেতেন। ওই সময় পাচক হিসাবে কর্মরত ছিলেন বিপিন ঠাকুর। সুমন্ত মহারাজ স্থানীয় চাঁদা আদায় করতেন। চাঁদা ছিল ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। যেদিন মহারাজ চাঁদা আদায় করতে যেতেন সেদিন ব্রাহ্মণ শরীরে কোন শিক্ষক শ্রীশ্রীঠাকুরের পূজা করতেন।

পরবর্তী অধ্যক্ষ হন স্বামী বিশ্বপ্রাণানন্দ (সুমন্ত মহারাজ)। সম্ভবত ১৯৭০-৭১ সালে বেলুড় মঠ থেকে প্রেরিত স্বামী চিত্রবানন্দ (নেপাল মহারাজ) গড়বেতাতে আসেন। তখন আশ্রমের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ থাকাতে, উনার বিশেষ চেষ্টাতে সিনেমার চারটি শো করে মিশনের ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা হয়। নেপাল মহারাজের ব্যবস্থাপনায় নরেন্দ্রপুর থেকে বালগার হুইট, বিস্কুট, দুধ ও সাবান ইত্যাদি আনা হতো এবং এইসব জিনিস আশেপাশের গ্রামে বিতরণ করা হতো। এরপর কর্মী হিসেবে আসেন স্বামী জনার্দনানন্দজী (যজ্ঞেশ্বর মহারাজ)। চাষবাস ও বাগানের কাজের জন্য খাদুবাবু বলে একজন থাকতেন, রান্নার জন্য ছিলেন বিপিন বাবু। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন রমেশ চন্দ্র দত্ত এবং পরবর্তীকালে ডাঃ সামুই। অফিস সংক্রান্ত কাজে সহযোগিতা করতেন অমিত মাধব সেন। নিয়মিত রামনাম ব্যবস্থাপনায় থাকতেন শ্যাম শর্মা।

১৯৮০ সালের শ্যামাপদ মহারাজ (স্বামী বীতরাগানন্দজি) অধ্যক্ষ হিসেবে আসেন। তিনি একজন কর্মযোগী ও অমায়িক সাধু ছিলেন। কর্মী হিসেবে কার্তিক মহারাজ, মানিক মহারাজ এবং ব্রহ্মচারী হিসেবে একে একে একে আসেন- উজ্জ্বল মহারাজ, নীরোজ মহারাজ, বুদ্ধদেব মহারাজ, প্রশান্ত মহারাজ, সুশান্ত মহারাজ, গৌরীশংকর মহারাজ এবং আরো অনেকে। এই সময় রঘুনাথ মহারাজ ব্রহ্মচারী হিসেবে গড়বেতা মঠে যোগদান করেন। ওই সময়, বেলুড় মঠের দশম প্রেসিডেন্ট পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দ মহারাজ বাঁকুড়া মঠ থেকে বেলুড় মঠ ফেরার পথে কিছুক্ষণের জন্য গড়বেতা মঠ পরিদর্শনে আসেন। তিনি মোট সংলগ্ন সমস্ত জমি সুরক্ষিত করার নিমিত্ত বাউন্ডারি দেওয়ার পরামর্শ দেন এবং সেই উদ্দেশ্যে ২০ হাজার টাকা আশ্রমে দান করেন। এতদ্ ব্যতীত জনৈক ভক্ত বেলুড় মঠ মারফত কিছু টাকা আশ্রমে দান করেন। ফলস্বরূপ, পূজনীয় শ্যামাপদ মহারাজের তত্ত্বাবধানে আমলাগোড়া নিবাসী শ্রীযুত শম্ভুনাথ কুন্ডু মহাশয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে জমি জরিপের কাজ সম্পন্ন হয় এবং উজ্জ্বল মহারাজের উদ্যোগে সমস্ত জমি এক বাউন্ডারির মধ্যে আসে- যা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। ওই সময় পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা হল গভীর নলকূপ আর বড় জলাধার তৈরি হওয়ায়। উজ্জ্বল মহারাজের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়বেতা সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামে বৈদ্যুতিকরণ ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে আশ্রমের নিকটবর্তী গ্রামে ব্যাপক জল ব্যবস্থা করা হয়।

শ্যামাপদ মহারাজ মায়ের খুব ভক্ত ছিলেন। ওনার তত্ত্বাবধানে সে সময় চারদিন ব্যাপী দুর্গাপূজা, লক্ষীপূজা, ফলহারিনি কালীপূজা (পটে) ও মূর্তিতে কালীপূজা শুরু হয়। প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং লক্ষ্মী পূজা করেছিলেন বাদল চন্দ্র চক্রবর্তী। পুজোর সময় দুঃস্থদের মধ্যে ৪০০/৫০০ কাপড় বিতরণ করা হত। ওই সময় প্রথম মঠে দীক্ষার ব্যবস্থা হল। পূজনীয় ভূতেশানন্দজী মহারাজ বহুস্থানীয় ভক্তকে দীক্ষাদান করেন। দীক্ষা দানের পরে মহারাজ পুরনো সাধুনিবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শ্যামাপদ মহারাজ খুব বৃক্ষপ্রেমী ছিলেন। ওনার সময় আশ্রমে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল। বৃক্ষ রোপণ ও চারাগাছ সরবরাহ করতেন লক্ষীকান্ত মন্ডল। ওই সময় আগরা প্রাইভেট আশ্রমের শুরু আগরা প্রাইভেট আশ্রম তৈরিতে ওনার আগ্রহ ছিল সর্বাধিক।

১৯৯০ সালে শ্যামাপদ মহারাজ মঠে ফিরে যান। শ্যামাপদ মহারাজের স্থলাভিষিক্ত হন শান্তিদানন্দ মহারাজ। উনি খুব নিয়মনিষ্ট ছিলেন। ওনার সময় আশ্রমের বিবিধ উন্নতি হয়। এই সময় Monks Quarter টি সম্পন্ন হয়। Guest House এর সংস্কার সাধন এবং মন্দিরের পাশের ভান্ডার ঘরটি নির্মাণ হয়। উনার সময় শ্রীমৎ স্বামী গহনানন্দজী মহারাজ একাধিকবার গড়বেতাতে ভক্তদের দীক্ষাদান করেন। শান্তিদানন্দজী মহারাজ বাচ্চাদের খুব ভালবাসতেন। ওনার আসার কিছুদিনের মধ্যে আশ্রমে ছেলেদের জন্য কিশোর বাহিনী গঠিত হয়। সেখানে ছেলেদের আবৃত্তি করা এবং ঠাকুর, মা ও স্বামীজীর বাণী গুলো মুখস্থ করা, অন্যান্য নৈতিক ক্লাস ও নিয়মিত খেলাধুলা করানো হত। এরপর আসেন তরুণ মহারাজ।

১৯৯৮-২০১৫ সাল অব্দি মঠের অধ্যক্ষ হিসেবে কার্য নির্বাহ করেন স্বামী লোকেশানন্দ (বিধু মহারাজ)। তিনি অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের সাধু ছিলেন। ক্রমে কর্মী হিসেবে আসেন আনন্দ মহারাজ, অভিজিৎ মহারাজ, গণেশ মহারাজ, বিষ্ণু মহারাজ, অসীম মহারাজ, সৌমেন মহারাজ, প্রশান্ত মহারাজ এবং ওই সময় যোগদান করেন সোমনাথ মহারাজ, প্রদীপ মহারাজ, দীপাঞ্জন মহারাজ। ওনার সময় শ্রীমৎ স্বামী গহনানন্দজী মহারাজ, শ্রীমৎ স্বামী আত্মস্থানন্দজী মহারাজ, শ্রীমৎ স্বামী গীতানন্দজী মহারাজ এবং শ্রীমৎ স্বামী স্মরণানন্দজী মহারাজ, শ্রীমৎ স্বামী বাগীশানন্দজী মহারাজ গড়বেতাতে আসেন ও ভক্তদের দীক্ষা প্রদান করেন। বিধু মহারাজের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় অফিস বিল্ডিং, ডিস্পেন্সারি বিল্ডিং ও চক্ষু অপারেশন থিয়েটার। এছাড়া ডেন্টাল চেয়ার, মেডিকেল ভ্যান, চাষের জন্য পাওয়ারটিলার আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়। স্থাপিত হয় স্বামীজীর পূর্ণাবয়ব ফাইবারের মূর্তি। সংস্কার হয় পুষ্করিণীর।

২০১৫ -এর ডিসেম্বরে থেকে ২০২৩ -এর ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন স্বামী গৌরাঙ্গানন্দজী মহারাজ। তিনি শতবর্ষের শুরুতে মন্দির সংস্কারের মাধ্যমে আশ্রমে শতবার্ষিকী পালন কার্যক্রম শুরু করেন। শতবর্ষের কার্যক্রমের অঙ্গ হিসেবে শতবার্ষিকী তোরণ, দাতব্য চিকিৎসালয়ের রোগীদের বসার ঘর, মাঠের আদি বাড়ীর সংস্কার, সাধু নিবাস ও একটি সভাগৃহের নির্মাণ কার্য শুরু করেন।

২০২৩ -এর ডিসেম্বর থেকে বর্তমানে মঠের অধ্যক্ষ হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করেন স্বামী একেশানন্দজী মহারাজ।

bottom of page